টেকনাফে সশস্ত্র রোহিঙ্গা গ্রুপ গড়ে উঠেছে
জাফর আলম, কক্সবাজার :
কক্সবাজারের টেকনাফে অপহরণের ঘটনা গুলোতে শুরুর দিকে স্থানীয়দের যোগসাজশে রোহিঙ্গারা মিলিত হলেও, বর্তমানে এসে তৈরি হয়েছে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র আলাদা গ্রুপ।মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা ভুক্তভোগীরা বলছেন অপহরণে এখন একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে গহীন পাহাড়কে কেন্দ্র করে। পাহাড় এখন তাদের অভয়ারণ্য।
টেকনাফ বাহারছড়ার বড় ডেইল এলাকার এলাকার মুদি দোকানদার জসীম। সম্প্রতি অপহরণের শিকার হন তিনিও। জসীম বলেন, দোকান বন্ধ করতে গিয়েছিলাম রাত ১১টার দিকে। প্রায় ১৮ জনের মতো সন্ত্রাসী আমাকে নিয়ে যায়। এরপর ঘরে কথা বলতে দিয়ে নির্যাতন করা হয়।৯ দিন নির্যাতনের মুখে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ফেরেন জসীম। ফিরে এসে মামলা করেছেন।
রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপ গুলোর তথ্য খুঁজতে গিয়ে আমাদের হাতে আসে অস্ত্র হাতে এক যুবকের ছবি। বিভিন্ন ক্যাম্পের মাঝিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তার নাম মোহাম্মদ শফি। সে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি ব্লকের বাসিন্দা।পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে।রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একাধিক মাঝি (রোহিঙ্গাদের সামাজিক নেতা) নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শফি ছিলো সালমান শাহ গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড। এখন আলাদা হয়ে করেছেন নিজস্ব গ্রুপ। ২০২২ সালের ৫ মে এপিবিএনের হাতে অস্ত্রসহ আটক হয়ে কারাভোগও করেছেন।
এখন জামিনে বের হয়ে পাহাড়ে তার নেতৃত্বে চলছে ত্রাস।সম্প্রতি অপহরণের শিকার হয়ে মুক্তিপনের বিনিময়ে ফিরে আসা একাধিক ভুক্তভোগী জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গড়ে উঠা বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে স্থানীয় চক্র গুলোর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। এরপর টার্গেট করে বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে শিশুদের পর্যন্ত অপহরণ করে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে।টেকনাফের দায়িত্বে থাকা র্যাব-১৫ এর স্কোয়াড্রন লিডার তৌহিদুল মবিন খান জানান, তাদের কাছে তথ্য আছে পাহাড়ে কয়েকটি সশস্ত্র ডাকাত গ্রুপ সক্রিয় থাকার।
তাদের আস্তানা গুলো চিন্তিত করার কাজ চলছে।কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন জানান, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় এ সময়ে টেকনাফের পাহাড়ি এলাকা গুলোতে অপহরণের ঘটনা ঘটে বেশি।অপহরণের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে তিনি বেশ কয়েকটি কারণ হিসেবে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, মানবপাচার, মাদক ব্যবসার টাকা সংগ্রহ, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় অপহরণ বন্ধে বেগ পেতে হচ্ছে।ইতোমধ্যে উপর মহল থেকে নির্দেশ এসেছে জানিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, শীঘ্রই বিশেষ ফোর্স নিয়ে পাহাড়ে অভিযান শুরু হবে বলে জানান তিনি।