১৩ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, রবিবার, রাত ২:৫১



আজ : ১৩ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, রবিবার প্রকাশ করা : এপ্রিল ১০, ২০২৫

  • কোন মন্তব্য নেই

    ইকবাল আহমদ অভির নিয়োগে এনআরবি ব্যাংকে অস্থিরতা, অপসারণ চায় সাধারণ কর্মকর্তারা

    নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা :

    সিলেটের ওসমানী নগর উপজেলার ইকবাল আহমদ অভি ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে নিজের খোলস পাল্টেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিগত আওয়ামী আমলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তার ছিল বেশ সখ্যতা। সময়ের সাথে সাথে ক্ষমতার পালাবদল হলেও ইকবাল আহমদ অভি আছেন আগের মতোই। অভিযোগ আছে অভি আওয়ামীলীগ সরকারের অনেক প্রভাবশালী এমপি মন্ত্রীর লন্ডনে টাকা পাচারের অন্যতম আস্থার জায়গা। তবুও সেই অভিই এখন এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক (চেয়ারম্যান), যা সব মহলে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

    জানা যায়, দুর্নীতির দায়ে ২০১৫ সালে লন্ডনের আদালত জরিমানা করার পর ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার থেকে আজীবন বহিষ্কৃত ফ্যাসিবাদের দোসর সীমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান হিমায়িত মাছের ব্যবসায়ী ইকবাল আহমদ অভি এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক (চেয়ারম্যান) হওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। যিনি শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হয়ে আওয়ামী লীগের ১৪ বছর লুটপাট করেছেন তাকে এনআরবি ব্যাংকের শীর্ষ পদে বসানো হলো কিভাবে? এ প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সচেতন মহলে।

    এনআরবি ব্যাংকে ইকবাল আহমদ অভির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ নিয়ে ব্যাংকের অভ্যান্তরে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, দেশের ব্যাংকিং খাতে যে অস্থিরতা বিরাজমান এমন বিতর্কিত নিয়োগ তা আরও উস্কে দিল বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশ না করতে চাওয়া ব্যাংকটির একজন পরিচালক।

    অন্যদিকে আগামী সপ্তাহে ব্যাংকটির সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাঁর অপসারণের জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে নিশ্চিত করেছে।

    ইকবাল আহমদ অভি’র বাড়ী ওসমানী নগর উপজেলার বুরুঙ্গা গ্রামে। বিগত আওয়ামী আমলে অভির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখা যেত স্বৈরাচার হাসিনার সাথে ঘনিষ্ট ছবি । আর এখন শেখ হাসিনার স্থলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের সাথে তার সখ্যতার স্থিরচিত্র ভাইরাল হচ্ছে নেট দুনিয়ায়।

    ইকবাল আহমদ অভি’র এরকম স্ট্যান্ডবাজিতে নানান প্রশ্ন করছেন বিভিন্ন মহলের লোকজন। তারা বলছেন, ‘যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, কিছু ব্যক্তির তাতে কিছু যায় আসে না। কারণ পরিস্থিতি বুঝে খোলস পাল্টাতে তাদের সময় লাগে না। এমনই একজন ইকবাল আহমদ অভি।’

    বিগত জুলাই-আগস্ট এর গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ছাত্র-জনতার প্রিয়মুখ ড. মুহম্মদ ইউনূসের সাথে তার ঘনিষ্টতার ছবি প্রকাশ্যে আসায় মেনে নিতে পারছেন না সচেতন মহল। তারা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সতর্কতার সাথে পথচলার আহবান জানিয়েছেন।

    সূত্র জানায়, ইকবাল আহমদ অভি’র উত্থান সম্পর্কে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি বিগত এক দশক ধরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে নিজের অবস্থান গড়ে তোলেন। তার ফেসবুক প্রোফাইলজুড়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে অসংখ্য ছবি শেয়ার করা হতো, যা তাকে ‘হাসিনা বিশ্বস্ত’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টে সরকারবিরোধী গণআন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই অভি’র ভিন্নমুখী কার্যকলাপ লক্ষ্য করা যায়।

    গত কয়েক সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে অভি ও ড. মুহম্মদ ইউনূসের একাধিক ছবি। নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অভি’র এই নতুন সম্পর্ককে অনেকেই ব্যাখ্যা করছেন ‘সময়ানুগত্য’হিসেবে। ফেসবুক ইউজার রফিকুল ইসলামের মন্তব্য’ যে হাসিনাকে আগে ‘দেশের মা’ বলত, সেই আজ ইউনূস সাহেবের পাশে— এটা কি নীতিহীনতা নাকি বাস্তবতার সমঝোতা?”

    ওসমানী নগরের স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক আলমগীর হোসেন বলেন, অভি সাহেবের রাজনৈতিক রং বদলের ইতিহাস নতুন নয়। তিনি প্রতিটি সরকারের সাথেই সম্পর্ক রেখে চলেন। এটাই তার টিকে থাকার কৌশল। তবে অভি’র সমর্থকদের দাবি, তিনি কখনোই দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠেননি, বরং উন্নয়নমূলক কাজে সরকারি সহযোগিতা চেয়েছেন।

    রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সায়েদা সুলতানা বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই ধরণের সুবিধাবাদী চরিত্র নতুন নয়। তবে সামাজিক মাধ্যমের যুগে এদের প্রভাব আরও দৃশ্যমান। অভি’র ঘটনা প্রশ্ন তুলছে, ক্ষমতার গলিপথে কি নীতিহীনতা গ্রহণযোগ্য হতে পারে?” তিনি সতর্ক করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে স্পষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা, যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে চায়।

    সিলেটের সুশীল সমাজ ও ছাত্রনেতাদের একাংশ অভি’র এই আচরণকে “অনৈতিক” আখ্যায়িত করে বর্তমান সরকারকে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। সাম্প্রতিক এক আলোচনা সভায় সিলেট সিটি কলেজের অধ্যাপক ড. নাজমা আক্তার বলেন, যে ব্যক্তি গতকাল পর্যন্ত একটি আদর্শের নামে জনগণকে বিভ্রান্ত করত, আজ সে নতুন মুখ—এটা গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারের উচিত স্বচ্ছতা বজায় রাখা।

    এ বিষয়ে ইকবাল আহমদ অভি’র সাথে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।