কক্সবাজারে গুলিতে নিহত খুলনার সাবেক কাউন্সিলর রব্বানীর দাফন সম্পন্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক । নিউজনেক্সটবিডি.কম
কক্সাবাজারে গুলিতে নিহত খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বরখাস্তকৃত কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী টিপুর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (১১ জানুয়ারি) বাদ জোহর খুলনার দৌলতপুর থানাধীন দেয়ানা উত্তরপাড়া স্কুল মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।কেসিসির বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে জানাযা শেষে তাকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এর আগে শনিবার ভোরে দৌলতপুরের দেয়ানা হোসেন শাহ সড়কে নিজ বাড়িতে টিপুর মরদেহ নিয়ে আসলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলরকে দেখতে শত শত মানুষ তার বাড়িতে ভিড় জমায়। লাশ দেখে অনেকেই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তারা খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানান।পরিবার ও স্থানীয়দের ধারণা জনপ্রিয়তার কারণে সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাকে ঢাকা থেকে প্রলোভন বা ফুঁসলিয়ে কক্সবাজারে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তারা টিপু হত্যার বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
খুলনার দেয়ানার বাসিন্দারা বলেন, কোনো হত্যায় কাম্য নয়। এই হত্যার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করতে হবে। বিগত সময়ে হত্যার তেমন ভালো বিচার হয়নি। বর্তমান সরকার এই বিষয়ে দৃষ্টি দিয়েছেন, আমরা আশা করি হত্যার বিচার পাবো। তারা বলেন, শুনেছি কোনো এক নারী ছিল, সেই নারীকে এই বিষয়টিও উদঘাটন করা প্রয়োজন।সাবেক কাউন্সিলর টিপু খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তার বাইরের শত্রু আছে কিনা জানা নেই, তবে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করে কাউন্সিলর হন। সেই হিসেবে কোনো শত্রু থাকতে পারে। কক্সবাজারে তার ব্যবসা ছিল, সেখানে ব্যবসায়ের কাজে গিয়েছিলেন। দেয়ানার বাসিন্দারা বলেন, কারও উপকার করলে একজনের ভালো হয়, অন্যজনের ক্ষতি হয়। তার শত্রুর অভাব নেই। এখানেও শত্রু থাকতে পারে, কক্সবাজারেও শত্রু থাকতে পারে। কেসিসির সাবেক কাউন্সিলর শেখ রুহুল আমীন বলেন, বিচার হচ্ছে না বিধায় এ ধরনের হত্যাকাণ্ড। আমি চাই এই খুনের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হোক। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হোক।
নিহত টিপুর বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গোলাম আকবর বলেন, খুলনা থেকে লোক যেয়ে তাকে ফুঁসলিয়ে ঢাকা থেকে নিয়ে গেছে কক্সবাজারে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। এখন যারা গোপনে আনন্দ করছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার দাবি জানান তিনি।নিহত টিপুর বড় ভাই স্কুলশিক্ষক গোলাম রসুল বাদশা বলেন, টিপু ঢাকায় ছিল। তাকে প্রলোভন দেখিয়ে কেউ হয়তো কক্সবাজারে নিয়ে গেছে। আমাদের ধারণা তাকে ওখানে নিয়ে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে মেরে ফেলেছে। শুক্রবার রাত ১০টার পর খবর পেয়ে সেখানে যেয়ে লাশ নিয়ে এসেছি। আল্লাহর কাছে বিচার চাই। পূর্ব শত্রুতা এবং জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে সরানোর পরিকল্পনা হতে পারে।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসংলগ্ন হোটেল সিগালের সামনে টিপুকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে টিপুর বোনের স্বামী ইউনূছ আলী শেখ কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। তবে ঘটনার পরপরই কেসিসির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের অপসারিত কাউন্সিলর হাসান ইফতেখার চালু এবং কক্সবাজারের ব্যবসায়ী ও শহরের টেকপাড়া এলাকার নুরুল কবির ভুট্টকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৫। যদিও চালুর কক্ষে থাকা রিমিকে খুঁজে পায়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।এক সময়কার ছাত্রমৈত্রী নেতা গোলাম রব্বানী টিপু জড়িয়ে যান চরমপন্থি দলে নাম লিখিয়ে দীর্ঘদিন ছিলেন এলাকার বাইরে। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে এলাকায় এসে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। সর্বশেষ ছিলেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি। ২০১৫ সালে প্রভাবশালী চরমপন্থী নেতা বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা শহিদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদ হত্যার শিকার হলে টিপুকে প্রধান আসামি করে মামলা করেছিলেন শহীদের পরিবার।