ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে টিউলিপের ৪০০ কোটি পাউন্ড ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক । নিউজনেক্সটবিডি.কম
যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা ৪০০ কোটি পাউন্ড ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে।
ব্রিটেনের আর্থিক খাতে দুর্নীতিরোধের দায়িত্ব সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের কাঁধে।
তার জন্মভূমি বাংলাদেশে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির সঙ্গে জড়িত কথিত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিউলিপ সিদ্দিক, তার যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী মা শেখ রেহানা সিদ্দিক এবং তার খালা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।
হাসিনা গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন, সঙ্গে ছিলেন তার বোন রেহানা (টিউলিপের মা)। এর আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা সহিংস প্রতিবাদে নিরাপত্তা বাহিনী শত শত বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে।
দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয় দেশের হাইকোর্টের নির্দেশে। যেখানে অভিযোগ উঠেছে, টিউলিপ সিদ্দিক মোট ১০ বিলিয়ন ডলারের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ চুক্তির ‘দালালি’ করতে সহায়তা করেছিলেন।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি রোসাটম কাজ করছে। ২০১৩ সালে হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন টিউলিপ সিদ্দিকের উপস্থিতিতে ক্রেমলিনের ভেতরে চুক্তিটি সই করেন। টিউলিপ তখন লেবার পার্টির একজন কাউন্সিলর ছিলেন।
সিদ্দিকের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করছে দুদক। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত তার খালাতো ভাই সজীব ওয়াজেদ জয়, তার চাচা পলাতক তারিক সিদ্দিকও রয়েছেন। আদালতের কাগজপত্রে তাদের নাম ছিল।
দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কমিশন জড়িতদের অবস্থান নির্বিশেষে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে টিউলিপ সিদ্দিক এ বিষয়ে অস্বীকার করেছেন।
টিউলিপের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলেছে, আমেরিকান ওয়েবসাইটে প্রথম প্রকাশিত হওয়া অভিযোগ ‘ভুয়া’। আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্যের সাধারণ সম্পাদক এবং সিদ্দিকের পারিবারিক বন্ধু সৈয়দ ফারুক বলেন, এই গল্পগুলো বানোয়াট। এগুলো হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আক্রমণ। তারা টিউলিপকে আক্রমণ করছে, কারণ সে আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি।
টিউলিপ সিদ্দিক সিটি মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বিতর্ক তাকে পিছু ছাড়ছে না। জুলাই মাসে মন্ত্রী হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডার্ডসের তদন্তের মুখে পড়েন। তিনি লন্ডনের একটি সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত ভাড়া ১৪ মাস ধরে ঘোষণা করেননি বলেও খবর সামনে এসেছে। পার্লামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী, এমন আয় ২৮ দিনের মধ্যে ঘোষণা করতে হয়।
টিউলিপের অফিসিয়াল উপাধি ট্রেজারির অর্থনৈতিক সচিব। তিনি ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং ভুলটি ‘অসাবধানতাবশত’ হয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন। আগস্টে গণমাধ্যমে আসে কীভাবে সিদ্দিক দুই বছর আগে দুই মিলিয়ন পাউন্ডের পাঁচ বেডরুমের বাড়িতে চলে যান, যেটি তিনি তার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক এক মিত্রের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছিলেন।
বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ ববি হাজ্জাজ সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করার পর সিদ্দিক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।
টিউলিপ সিদ্দিক নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি সইয়ের সময় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদলের অংশ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।