২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার, ভোর ৫:০৯



আজ : ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার প্রকাশ করা : ডিসেম্বর ১০, ২০২৪

  • কোন মন্তব্য নেই

    দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ থেকে আগষ্টিন হাতিয়েছেন শত কোটি টাকা

     

    বিশেষ প্রতিনিধি । নিউজনেক্সটবিডি.কম

     

    দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ লি (কালব) এর ব্যবস্থাপনা কমিটির চতুর্থ মেয়াদের চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে ব্যবস্থাপনা কমিটি থেকে সাত জন সদস্য পদত্যাগ করেছেন গত জুলাই মাসে। সমবায় আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী বোর্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য পদত্যাগ করলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে বোর্ড ভেঙ্গে যায়। তখন সমবায় অধিদপ্তর অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে দেয়। অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি ১২০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচনের আয়োজনের ব্যবস্থা করে।

     

    সমবায় আইন ও বিধিমালার তোয়াক্কা না করে বহাল তাবিয়ায়ে নিজের কর্মকান্ড চালু রেখেছেন চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন।

     

    নিজেকে সমবায়ের গডফাদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে এহেন কোনো অপকর্ম নেই করেনি আগষ্টিন।

     

    তিনি পাগাড় খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের, প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটার এবং মাউসাইদ খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের, আভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ কমিটি চেয়ারম্যানও বটে! এছাড়া এ তালিকায় আছে স্বজন কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন, দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন, যেখানে তিনি উপদেষ্টা।

     

    দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ লি: (কালব) সূত্র থেকে জানা যায়, মূলত স্বেচ্ছাচারিতা, বিদ্যমান সমবায় আইন,বিধিমালা ও কালবের উপ-আইন উপেক্ষা করে এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহন, ঋণ বিতরনের মত মূল কার্যক্রম বাদ দেয়ার মাধ্যমে খেলাপী বানিয়ে সদস্য ক্রেডিট ইউনিয়নের মৃতবৎ অবস্থাকরণ এবং নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ করে, পদত্যাগকারি সদস্যরা সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক শরীফুল ইসলামের সাথে দেখা করে পদত্যাগ পত্রের অনুলিপিও প্রদান করেন।

     

    বিদ্যমান আইন উপেক্ষা করে চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল আছে আগষ্টিন পিউরীফিকেশন। যাকে কালবের একটি অংশ অবৈধ হিসেবে দাবি করছেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ও রাজধানীর ২৭ নাম্বার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহাদাত হোসেন চৌধুরী মিন্টুর প্রভাবেই সম্ভব হয়েছে। আগষ্টিন পিউরীফিকেশন নিয়মিত যাতায়ত করতেন কামালের ধানমন্ডি ও মণিপুরিপাড়ার বাসায়।

     

    আসাদুজ্জামান কামালের আশ্রয় প্রশ্রয়েই তিনি দু’টি সমবায় অবৈধভাবে দখলে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে বলে দাবি করেছে একই সূত্র।

     

    গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানার পাগার গ্রামের দর্জি ও জমির দালাল আগষ্টিন পিউরিফিকেশন ১৯৯২ সালের ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখে দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: (এমসিসিএইচএসএল) এর সদস্য হন। বাকি গল্পটা আলাদিনের চেরাগের কাহিনীকেও হার মানিয়েছে, চেরাগ ঘষে এখন হাজার কোটি টাকার মালিক, নামে বেনামে দেশে বিদেশে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। সমবায় প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বেহাত করে আবাসন ও ডেভেলপার কোম্পানি ‘স্বস্তি নিবাস লিঃ’ গড়ে তুলেছেন।

     

    অভিযোগের সুরে কালবের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এত অভিযোগ, অনিয়ম দুর্নীতি তারপরও আছেন বহাল তবিয়তে, প্রস্তুতি নিচ্ছেন আগামী নির্বাচনের। কিসের স্বার্থে একজন মানুষ একটি প্রতিষ্ঠানের পঞ্চমবারের মত চেয়ারম্যান হতে চায় সে প্রশ্ন তোলা উচিত, থাকা উচিত আইন।

     

    তিনি আরও বলেন, শুনেছি নিজের ইমেজে ঠিক করতে তিনি পেশাদার পিআর এজেন্সিও নিয়োগ দিয়েছেন।

     

    যে বিতর্কিত নির্বাচন থেকে আগষ্টিন চেয়ারম্যান :

     

    ১১ নভেম্বর-২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত হয় কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশের নির্বাচন, যে নির্বাচন জন্ম দিয়েছিল নানা বিতর্কের। কালবে নির্বাচন করার জন্য প্রাথমিক যোগ্যতা, সিউডিসিসি কোর্স সম্পন্ন করেন নি আগষ্টিন পিউরিফিকেশন। নির্বাচন পক্রিয়ার মধ্যে থাকা কালবের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলে, চেয়ারম্যান প্রার্থী আগষ্টিন পিউরিফিকেশনের সিইউডিসিসি কোর্স না করার কারনে মনোনয়ন বাতিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে তার নামে ব্যালট মৃদ্রনও স্থগিত করেন নির্বাচন কমিটি। কিন্ত কোন এক অদৃশ্য কারনে শেষ সময়ে এসে কোন পত্র ইস্যু করা ছাড়াই তার প্রার্থীতা বহাল রাখে।

     

    সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, আগষ্টিন পিউরিফিকেশন-কে চেয়ারম্যান ঘোষণা করা সম্পূর্ণ বেআইনী। তিনি বেআইনী ভাবে কালবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। আকু অনুমোদিত কালব পরিচালিত সিইউডিসিসি কোর্সের বিকল্প হিসেবে, কাককো প্রদত্ত সিইউএমডিসিসি সনদ কখনো গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। এটা কোন কর্মে যখন সরকার স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ থেকে সনদ চাওয়া হয়, তখন তার স্থলে প্রাইমারি স্কুলের সনদ দাখিল করার শামিল। কাককো ক্রেডিট ইউনিয়ন ম্যানেজমেন্ট এন্ড ডিরেকটর কম্পিটেন্সি কোর্স (সিইউএমডিসিসি) নামে কোন প্রশিক্ষণ কোর্স কখনো পরিচালনা করেনি, নেই কোন কোর্স কারিকুলামও।

     

    সমবায় অধিদপ্তর ও নির্বাচন কমিটি আইন আদালতের সাথে কৌশলে প্রতারনা করেছেন।

     

    ধূর্ত আগষ্টিন নির্বাচনের প্রাক্কালে কালবের উপ-আইন সংশোধন চ্যালেঞ্জ করে দায়েরকৃত রীট পিটিশনে ( নং-১১৮০৮/২০২২ ) দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ(কালব) এর ২১/১১/২০১৯ তারিখের স্বারক নং-৩১৬(২) অনুমোদিত সমিতির সংশোধিত উপ-আইনের ২৭ ধারার ২,৪,৫ ও ৬ উপধারা স্থগিত করায়।

     

    শুধু তাই নয় জালিয়াতি করা হয়েছে রীটের নথিপত্রেও, হাইকোর্টের কজলিস্টে রীট পিটিশনারের নাম ডেভিড প্রবিন রোজারিও না লিখে লেখা হয়েছে ‘প্রবির রেজা’ এবং বিবাদি যেখানে কালবের নির্বাচন কমিটি সেখানে লেখা হয়েছে ‘বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন’।

     

    আগষ্টিন পিউরীফিকেশনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ :

     

    দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ (কালব) এর প্রস্তাবিত প্রধান কার্যালয়ের জন্যে দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:(এমসিসিএইচএসএল) থেকে বাজারদরের প্রায় দেড়গুণ, কারো মতে প্রায় দ্বিগুন মূল্যে জমি ক্রয় করার তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকা জেলার ভাটারা এলাকার বাড্ডা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের অধিন ১০০ ফিট মাদানী রোডে অবস্থিত ভাটারা ৩ নং প্রকল্পের ১৮ ও ১৯ নং প্লট রাস্তার অংশ সহ ৫.৪৩৯ কাঠা জমি ক্রয় করার নিমিত্তে জমির মূল্য, রেজিস্ট্রেশন, খাজনা, সার্ভে,ভ্যাট ও ৬% ফান্ড কস্ট সহ মোট পরিমান ৮,৪১,৭৪,০৭৬.৩৬ টাকা নির্ধারন করা হয়। পরবর্তিতে ফান্ড কস্ট বাদ দেয়া হয়। গত ১৩ জুন-২০২৩ তারিখে ৭৯৪০৯৫০৬ টাকা মূল্যে জমি রেজিস্ট্রেশন করা হয়। দলিল নং ৮৪৪৮/২০২৩।

     

    স্থানীয়রা জানিয়েছে সি.এস ও এস.এ ২৭০৭,আর.এস ৭০৭১ ঢাকা সিটি জরিপের ১৫৪২৬ নং দাগের ভিটা জমি ০৫০৮অযুতাংশ ও ০৩১২ অযুতাংশ এবং সিএস ও এস.এ ২৭৩৪ ,আর.এস ৭০৭০ ঢাকা সিটি জরিপের ১৫৪৩৮ নং দাগের ০০৭৭.৫০ অযুতাংশ জমি ক্রয় করা হয়।এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে,ক্রয়কৃত জমির এলাকার শ্রেণি অনুপাতে বাজারদর ৮০ থেকে ১ কোটি টাকার মধ্যে।

     

    অন্য যত অভিযোগ :

     

    আগষ্টিন দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: ও দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ লি:(কালব)এ অবৈধভাবে চেয়ারম্যান সমিতিকে বানিয়েছেন নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।এমসিসিএইচএসএল-এ আগষ্টিনের নেই কোন জবাবদিহিতা। বোর্ড সদস্যরা তার অধীনস্থ কর্মকর্তা কর্মচারীর মতো কাজ করেন।

     

    কালব সূত্র জানায়, সমবায় অধিদপ্তর এমসিসিএইচএসএল এর যে অডিট করে তাতে অনিয়ম দুর্নীতির ছিটেফোঁটাও ওঠে আসে না। গোপন সমোঝোতার কারণে অডিট দলের নজরে পড়ে না কোন অনিয়ম দুর্নীতি। তাছাড়া, একাধিক সমবায় কর্মকর্তা নিয়মিত এমসিসিএইচএসএল এ অফিস করে।

     

    এছাড়া, জমি সরাসরি ক্রয় না করে তার স্ত্রী, পুত্র, ভাই ও আত্মীয় স্বজনের নামে পাওয়ার অব এটর্নী নিয়ে আবার বেশি দামে সমিতির কাছে বিক্রি করেন। প্লট ফ্লাট বিক্রির ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসরন করেন। এবং এমসিসিএইচএসএল’র সকল ঠিকাদারি কাজ নামে বেনামে তার পুত্রদ্বয়, স্ত্রী, ভাই সহ পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনরাই করে বলে অভিযোগ উঠেছে । তার পরিবারের সদস্যদের ব্যবসা বলতে এমসিসিএইচএসএল’র ঠিকাদারি।

     

    যদিও সমবায় আইন, বিধি, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস ও সমিতির উপ-আইন অনুযায়ী চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঠিকাদারি কাজে অংশগ্রহন করতে পারেন না।

     

    যত সম্পদের মালিক আগষ্টিন পিউরীফিকেশন :

     

    আমেরিকার মিশিগান অঙ্গরাজ্যে বাড়ি, গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানাধিন পাগাড়ে বিলাশবহুল বাড়ী, টঙ্গীস্থ জীনুর মার্কেটে একটি ৫তলা ও একটি ৭ তালা বিল্ডিং, তেজগাঁও হুন্ডা গলিতে ২টি ফ্লাট, মনিপুরিপাড়ায় ১টি ফ্লাট, উওরা ১৬ নং সেক্টরে ৫ কাঠা প্লট , এশিয়ান টাউনে ২টি প্লট ,পাগাড়ে ১ বিঘার প্লট , পাগাড়ে ১৫ কাঠার উপর বাড়ী, শেরপুর বার মারিতে আড়াই বিঘা প্লট ,তুমিলিয়ায় ২০ বিঘা প্লট , বাটারা ৪ নং সেক্টরে ২টি প্লট , ২য় স্ত্রী লতার নামে উওরার ৯ নং সেক্টরে ২টি প্লট , মাউসাইদে ২ বিঘা প্লট এবং ভাদুনে ১টি প্লট ।

     

    এ বিষয়ে আগষ্টিন পিউরীফিকেশকে বারবার ফোন করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।