২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বৃহস্পতিবার, সন্ধ্যা ৬:০৮



আজ : ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা : ডিসেম্বর ১, ২০২৪

  • কোন মন্তব্য নেই

    নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না রাজউক পরিচালক রাজিয়া সুলতানা

    nnbd

    নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ :

     

    নকশা বহির্ভুত অবকাঠামো নির্মাণে নারায়ণগঞ্জ দেশের অন্য যে কোনো অঞ্চলের থেকে এগিয়ে। যাদের নকশা অনুমোদন ও নির্মাণ তদারকি করার কথা সেই রাজউকের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে এসব দেখেও না দেখার। যার ফলে নারায়ণগঞ্জের মত ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনের ঝুঁকি বাড়ছে, মানুষের জন্য তৈরি হচ্ছে পরিকল্পনার নামে এক অপরিকল্পিত নগরায়নের ফাঁদ।

    সাম্প্রতিক ইয়াশফি ডেভলপার লিমিটেড, সুফিয়া কমপ্লেক্স, সেন্ট্রাল প্লাজা, আছিয়া ম্যানশন, টিপিল টাওয়ার, কেএমএস টাওয়ারসহ একাধিক ভবন নির্মাণে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজউক জোন ৮ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। রাজউক নিজেই এখন পরিকল্পিত নগরায়নের অন্তরায় হয়ে উঠেছে। ভবন নির্মাণের নিয়মনীতি নারায়নগঞ্জ জোনে শুধু কাগজ কলমের বিষয় হয়ে উঠেছে।

     

    পরিচালক রাজিয়া সুলতানার নীরব ভূমিকাও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

     

    নারায়ণগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, চাষাড়ার ৬৯ নং প্লটে সুফিয়া কমপ্লেক্স ৯ তলার নকশায় তৈরি হয়েছে ১০ তলা সে অভিযোগও আমলে নেয়নি রাজিয়া সুলতানা। সেন্ট্রাল প্লাজার ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে দেখা যায় অভিযোগ উঠা ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই, পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা নেই, ট্রান্সফরমার, জেনারেটর, বিদ্যুতের সাবস্টেশন সব এক জায়গায় করার পক্রিয়াও চলছে।

     

    এমনকি নারায়ণগঞ্জ রাজউক -৮’র অফিস টিপিএল টাওয়ারে রয়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতি, রাজউক কয়েকবার জরিমানা করেও মডিফাই করাতে পারে নাই টিপিএল ভবন। এ ভবনের ঠিক পাশেই কে এম এস টাওয়ার সেখানেও ভবন নির্মানে অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও চুপ রয়েছে রাজউক।

     

    এছাড়া, সেন্ট্রাল প্লাজা গাড়ী পার্কিংযের জায়গায় গোডাউন বানিয়ে দোকান ভাড়া দিয়েছে, নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এমনকি মূল ভবন থেকে রাস্তা রাখার কথা, তারা তাও রাখেনি। কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, সেন্ট্রাল প্লাজার মালিক আলমগীরের সাথে রাজউকের অফিসারদের দহরম-মহরমের কথা। সেই সম্পর্ক ও অর্থের বিনিময়ে আলমগীর অন্য আরও দুটি ভবন এমন নকশা বহির্ভূত কাজ করেছেন, জানিয়েছেন রাজউক জোন ৮’ এর নাম প্রকাশ না করতে চাওয়া এক কর্মকর্তা।

     

    স্থানীয় একাধিক বাড়ির মালিক প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাথমিক ছাড়পত্র থেকে ভবনের নকশার অনুমোদন প্রতি পদক্ষেপে ঘুষ বাণিজ্য রাজউক জোন ৮ অফিসের প্রত্যাহিক বিষয়, আগে তবুও কিছুটা গোপন ছিল এখন নতুন পরিচালক রাজিয়া সুলতানা আসার পর ওপেন সিক্রেট হয়ে গেছে।

     

     

    পরিচালক রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে অন্য যত অভিযোগ :

     

    রাজিয়া সুলতানা, সহকারী পরিচালক হিসেবে রাজউকে যোগদান ২৪ মার্চ ২০১১ তারিখ। চাকরির শুরুতে জিও ছাড়াই তিনি ২০১১ সালের ১৭ মে যুক্তরাজ্যে ভ্রমণে যান (পাসপোর্ট নাম্বার – Z 05442380 ) । যা চাকুরির বিধিমালা পরিপন্থি এমনকি ধারবাহিকভাবে রাজিয়া সুলতানার বিদেশ ভ্রমণ নিয়েও গুঞ্জন আছে খোদ রাজউক অফিসে, মালায়েশিয়া, দুবাই, কানাডা, আমেরিকা, ঘুরে বেরিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র নিশিচত করেছে, দেশের বাইরে রাজিয়া সুলতানার একাধিক ব্যবসায় বিনিয়োগ আছে, তাঁর ভ্রমণের কাগজপত্র পর্যালোচান করলে বিনিয়োগের সূত্র পাওয়া যাবে।

     

    দেশের মধ্যে তাঁর নামে বেনামে অঢেল সম্পত্তির তথ্য নিয়ে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে, ইতিমধ্যে পূর্বাচলে বিশেষ ব্যবস্থায় বাগিয়ে নিয়েছেন প্লট, হাজী ক্যাম্পের বিপরীতে দক্ষিণখানে করেছেন ৫ তলা বাড়ি। পূর্বাচলের প্লটের ক্ষেত্রেও অসৎ উপায় অবলম্বন করেছেন রাজিয়া সুলতানা। সাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাটাগরীতে বরাদ্দ পাওয়া প্লট কৌশলে নিজের করে নেওয়ার অভিযোগ আছে।

     

    জিও ছাড়া বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য, প্রশাসন ও অর্থ ও যুগ্মসচিব আলম মোস্তফা বলেন, জিও ছাড়া ভ্রমণের সুযোগ নেই, যদি কেউ করে থাকে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

     

    রাজিয়ার পদোন্নতিতেও আছে নানা গুঞ্জন। জানা যায়, রাজউকে উপপরিচালক (প্রশাসন) হিসেবে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১১টি এর মধ্যে পুরুণকৃত পদের সংখ্যা ০৮টি। সেখানে শুন্য পদের সংখ্যা ছিল ০৩টি। ইতিমধ্যে রাজউক কতৃপক্ষ ক্ষমতার অপব্যাবহার করে রাজিয়া সুলতানাকে শুন্যপদের বিপরীত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান কারছেন। অন্যদিকে উপ পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) হিসেবে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১২টি। এই ১২ টি পদই শূন্য আছে। এই ১২টি পদ থেকে পরিচালক হিসেরে দায়িত্ব প্রদান করা হচ্ছে না, যা রাজউক অভ্যান্তরে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

     

    অভিযোগের বিষয়ে রাজিয়া সুলতানাকে ফোন করেলে তিনি অসুস্থ বলে মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তায় অভিযোগের উত্তর দেন, জিও ছাড়া ভ্রমনের বিষয়কে অসত্য বলেছেন, প্রতিবেদক তাঁর কাছে জিও-এর একটি ছায়াকপি চাইলে তিনি তার উত্তর দেননি। তিনি আরও লেখেন ‘ আমি অতি সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জোনাল অফিসের দায়িত্ব গ্রহন করেছি। নারায়নগঞ্জ জোনের যে প্রতিষ্ঠান গুলির কথা উল্লেখ্য করেছেন সেগুলিসহ প্রযোজ্য অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিল্ডিং এর রাজউক বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে, নিচ্ছি। রাজউকের কার্যক্রম সদা চলমান’।

     

    জিও ছাড়া ভ্রমনের বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যানের বক্তব্য নিতে ফোন করলে তাকে পাওয়া যায়নি।